Saturday, June 8, 2019

গর্ভকালীন ফাটা দাগ দূর করার চিকিৎসা

গর্ভকালীন ফাটা দাগ দূর করার চিকিৎসা

গর্ভাবস্থার পরে মহিলাদের শরীরে ফাটা দাগ পড়া একটি সাধারন ঘটনা । এই দাগ অতি সূক্ষ্মও হয়ে থাকে অনেক সময় এই দাগ পরে  সাধারণত পেটের পাশ দিয়ে তাছাড়াও অন্যান্য জায়গায় এই দাগ পরতে পারে যেমন- তল পেটের নিচে বা উপরে, স্তনে, থাইয়ে, বাহুতে, পিঠের সাইডে ইত্যাদি জায়গায় ।

আজকে আমরা আলোচনা করব কীভাবে ঘরে বসে এই গর্ভকালীন দাগ দূর করা যায় । এর একটি হচ্ছে ঘরে বসে নিজে নিজে আর একটি হচ্ছে ডাক্তারি চিকিৎসার মাধ্যমে ।
পেটের ফাটা দাগ সাধারণত স্বাভাবিক ত্বকের রঙের চাইতে একটু বেশী সাদা হয়ে থাকে । এটি গর্ভকালীন সময় বেশীরভাগ মহিলাদের হয়ে থাকে । পরবর্তীতে যদিও আস্তে আস্তে ভাল হয়ে যায় তথাপিও দাগ থেকে যায় অর্থাৎ পুরুপুরি মুছে যায়না ।
গর্ভকালীন ফাটা দাগ যেহেতু নিজে নিজে পুরুপুরি ভাল হয় না বা দাগ কিছু থেকে যায় তথাপি আপনি কিছু ক্রিম, লোশন, এবং কিছু কিছু তেলের ব্যবহার দ্বারা এই দাগ দূর করতে পারবেন । যেগুলো ব্যবহারে আপনার শরীরের স্কিন বা চামড়া ভাল এবং সচল থাকবে ।
সাধারণত সন্তান জন্মদানের ৩-৬ মাস পরে এই ফাটা দাগ মহিলাদের পেটে বা পেটের আশেপাশে দেখা যায় ।

গর্ভকালীন ফাটা দাগ দূর করার কিছু ঘরোয়া পদ্দতিঃ

(ক) তেল ব্যবহারের মাধ্যমে ফাটা দাগ দূর করাঃ কিছু কিছু তেল আছে যেগুলো নিয়মমাফিক ব্যবহার করলে আপনার গর্ভকালীন দাগ দূর হবে এই তেলগুলোর মধ্যে রয়েছে ঃ

  • অলিভ অয়েল ব্যবহারঃ অলিভ অয়েল একটি বহু পরিচিত তেল। এই তেলটির গুণাগুণ হয়তো সবারই জানা। অলিভ অয়েল ত্বকের যত্নে প্রচুর কার্যকর। শুধুমাত্র ত্বকই না চুলের যত্নেও অনেক কার্যকর। ত্বক ময়শ্চারাইজিং রাখতে অলিভ অয়েলের তুলনা নেই। তথ্যসুত্রে জানা যায়, মিসরীয়রা পাঁচ বছর আগে থেকে ত্বকের রূপচর্চায় এই তেলটি আবিষ্কার করেন । এবং ব্যবহার করেন । এটি রক্ত সঞ্ছালন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে । কীভাবে এটি আপনার ফাটা দাগে ব্যবহার করবেন । 

  1. প্রথমে অল্প পরিমানে অলিভ অয়েল হাতে নিন তারপর এটি আপনার ফাটা দাগ যেখানে যেখানে রয়েছে সেখানে মালিশ করুন । 
  2. এই অলিভ অয়েল কমপক্ষে ৩০ মিনিট ধরে আপনার ফাটা দাগের জায়গায় লাগিয়ে রাখুন । এতে করে এই তেলে থাকা ভিটামিন  এ, ডি, এবং ই আপনার স্কিন ভালভাবে গ্রহণ করতে পারবে ।
  3. এই ৩০ মিনিট পর গোছল করে ফেলুন ।
  4. যদিও এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া তারপরেও এর ব্যবহার আপনার জন্য অনেক উপকারী ভাল হওয়ার আগ পর্যন্ত চালিয়ে যান দাগ ভাল হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ্‌ ।
  5. তাছাড়া ও আপনি অলিভ অয়েল,  পানি এর সাথে ভিনেগার মিশিয়ে একটি মিশ্রন তিরী করুন সমপরিমান সবকিছু দিয়ে তারপর মালিশ করুন  এই মিশ্রণটির  মাধ্যমে ।  



    • ভিটামিন ই 

      সমৃদ্ধ

       তেল 
      ব্যবহারঃ  সাধারণত ভিটামিন ই রয়েছে এমন ক্যাপসুল থেকে ভিটামিন ই তেল বানানো হয়ে থাকে । 

    1. প্রথমে আপনি ভিটামিন ই ক্যাপসুল থেকে তেল অপসারণ করুন ।
    2. কিছু পরিমানে ময়শ্চারাইজার নিন এবার এর সাথে ভিটামিন ই তেল দিয়ে একটি মিশ্রণ তিরী করুন । এই মিশ্রণটি আপনার ফাটা দাগে আলতোভাবে মালিশ করুন ।
    3. নিয়মিত এর ব্যবহারে আপনি খুবই ভাল ফলাফল পাবেন ইনশা আল্লাহ্‌ ।





      • ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারঃ ক্যাস্টর অয়েল বা রেড়ির তেল। আজকাল প্রায় সবার বাসাতেই শোভা পায় ছোট্ট, কাঁচের বোতলে রাখা এই তেল। 




      1. ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করে আপনি আপনার গর্ভকালীন দাগ দূর করতে পারেন নিমেষেই । ক্যাস্টর অয়েল ফাটা দাগের জায়গায় আলতো ভাবে মালিশ করুন ৫-১০ মিনিট ।
      2. এবার একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের মাধ্যমে আপনার ফাটা দাগের উপর রাখুন । এবার এর উপর হালকা গরম পানির পট দিয়ে ৩০-৪০ মিনিট ধরে ঘষতে থাকুন ।
      3. এবার জায়গাটা পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন ।
      4. ভাল ফলাফল পাবার জন্য বারবার একই কাজ করুন এবং অন্তঃত ১ মাস করুন ।

      তাছাড়াও আপনি অন্যান্য তেল যেমন- নারিকেল তেলের সাথে অন্যান্য তেল মিশিয়ে একইভাবে মালিশ করলে ভাল ফলাফল পাবেন ।



      (খ) এলোভেরা ব্যবহারঃ এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী আমাদের সবারই সুপরিচিত একটি ভেষজ উপাদান বা গাছ । এলোভেরা ভিবিন্ন রোগের  ওষুধ হিসেবে পরিচিত একটি প্রাকৃতিক উপাদান ।

      ভালমানের এলোভেরা জেল সংগ্রহ করুন ।




      1. এবার এই জেলটি ফাটা দাগে সরাসরি ব্যবহার করুন । যেখানে দাগ আছে সেখানে এই এলোভেরা জেলটি মেখে রাখুন ১৫- ২০ মিনিট । এভাবে সবসময় এই জেলটি মাখুন ।
      2. একটি চায়ের কাপ নিন । এবার এই কাপের চার ভাগের এক ভাগ জেল সাথে ৫-৬ টি এ ক্যাপসুল, ১০-১২ টি ই ক্যাপসুল একসাথে নিয়ে পিষে মিশ্রণ তিরী করুন । এবার এই মিশ্রণটি ফাটা দাগের অংশে মাখুন যতক্ষণ এটি পুরুপুরি শরীর গ্রহণ না করে ।
      3. এই মিশ্রণটি প্রতিদিন ২ বার ব্যবহার করুন ।

      (গ) মধু ব্যবহারঃ মধু  এবং কালিজিরা সর্ব রোগের ঔষধ । মধু যেকোনো দাগ দূর করার একটি কারয্যকরি উপাদান ।
      1. ছোট একটি কাপরের টুকরো নিন । এবার এই টুকরাটিতে সামান্য পরিমানে মধু দিয়ে ভিজিয়ে নিন । এবার এই কাপরটির সাহায্যে ফাটা দাগের স্থানে আলতো ভাবে লাগান এবং পুরুপুরি শুকানোর আগ পর্যন্ত এভাবে ঘষতে থাকুন ।
      2. ফাটা দাগের জায়গায় ব্রাশ দিয়েও মধু লাগাতে পারেন ।
      3. একটি পাত্রে কিছু পরিমানে মধু, লবন, এবং গ্লিসারিন নিন । এবার এগুলো একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তিরী করুন । 
      4. এবার ফাটা দাগের জায়গায় হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করুন  এবং এই মিশ্রনটি আলতভাবে ব্যবহার করুন ।
      (ঘ) ডিমের সাদা অংশ ব্যবহারঃ অধিক প্রোটিনে ভরপুর ডিমের ব্যবহারে ত্বক হয় দাগ মুক্ত একেবারে মসৃণ ও কোমল ।




      1. প্রথমে ২ টি ডিম নিন । এবার ডিম ভেঙ্গে এর সাদা অংশ আলাদা করে ফেলুন ।
      2. এবার আপনার যেখানে সাদা দাগ পরেছে সে জায়গাটি ভালভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন ।
      3. এবার ডিমের সাদা অংশ একটি চামচের মাধ্যমে নিয়ে ফাটা দাগের উপর পাতলা করে আবরনের মত করে লাগিয়ে রাখুন ।
      4. শুকানোর আগ পর্যন্ত এভাবে রেখে দিন ।
      5. এবার এই প্রলেপের উপর অলিভ অয়েল তেল লাগিয়ে দিন এতে হালকা ভেজা ভেজা হবে ।
      6. তারপর শুকানোর কিছুক্ষণ পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন ।
      7. এভাবে প্রতিদিন ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করুন কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ ।
      ()মাখন ব্যবহারঃ মাখনের ব্যভারেও ফাটা দাগ দূর হয় । কিন্তু কীভাবে ? প্রতিদিন আপনার ফাটা দাগে মাখন লাগিয়ে রাখুন তারপর কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন । এভাবে কিছুদিন ব্যবহারের ফলে আপনার ফাটা দাগ দূর হবে ।
      মাখন আপনার স্কিন বা ত্বককে রাখবে ময়েসচারাইজ ।



      (চ)চিনি ব্যবহারঃ চিনি ত্বকের অচল কোষগুলো সচল করে । তাছাড়া চিনি সঠিকভাবে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে । চিনির ব্যবহারেও ফাটা দাগ দূর হয় । আসুন কীভাবে ব্যবহার করে ফাটা দাগ দূর করা যায় দেখি-






      ২ চামচ চিনি নিন এবং ৪ চা চামচ পানিতে চিনি ভালোভাবে মিশিয়ে নিন
      এতে একটুকরা লেবুর রস মিশিয়ে নিন ।
      এবার এর সাথে আলমন্দ অয়েল মিশিয়ে নিন । বাজারে পাওয়া যায় ।

      এবার সবকিছুর মিশ্রণ একসাথে ভালভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন । এবার এই মিশ্রণটি দিয়ে প্রতিদিন আপনার যেখানে ফাটা দাগ রয়েছে সেখানে মেছেজ করুন ১০-১২ মিনিট । তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ।
      (চ)বেবি অয়েল ব্যবহারঃ বেবি অয়েল ত্বকের গুরুত্ব পূর্ণ কিছু উপাদানের কাজ করে থাকে । তাছাড়া বেবি অয়েল ত্বকের পুষ্টি যোগায় । কীভাবে ব্যবহার করবেন -





      1. প্রতিদিন গোসলের পর আপনার ত্বকের যেখানে ফাটা দাগ সেখানে এই অয়েল মেসেজ করুন
      2. এরকমভাবে মেসেজ করুন যেন আপনার ত্বক সেটা গ্রহণ করতে পারে । এতে আপনার কয়েক মিনিট সময় লাগবে ।

      (চ)বেকিং সোডা ব্যবহারঃ স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব কাজেই বেকিং সোডা ব্যবহৃত হয়ে থাকে । বেকিং সোডা কীভাবে আপনার ফাটা দাগ দূর করে আর কীভাবে এর ব্যবহার করবেন -



      1. প্রথমে ১ চামচ বেকিং সোডা নিন ।
      2. একটি আস্ত লেবুর রস নিন ।
      3. এবার লেবুর রসের সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে আটার গোল্লার মত পেস্ট তৈরি করুন ।
      4. এবার এই পেস্ট আপনার ফাটা দাগের উপর বার বার ঘুরান । এভাবে ২০-৩০ মিনিট এটি দিয়ে আপনার ফাটা দাগের উপর দিয়ে চালনা করুন ।
      5. এবার হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ।
      অতি দ্রুত আপনার দাগ সারিয়ে তুলতে প্রতিদিন ব্যবহার করুন । এটি আপনার অচল ত্বকের অচল কোষগুলো সচল করে আপনার ফাটা দাগের কালো দাগ দূর করে আপনার ত্বককে অতি দ্রুত ভাল করবে ।



      -----------------------------------------

      1 comment: