Monday, June 17, 2019

ডায়াবেটিস হলে কি কি করা যাবে ?





ডায়াবেটিস কি ? আসলে ডায়াবেটিস একটি হরমোন সংক্রান্ত রোগ । মানুষের অগ্ন্যাশয় থেকে উৎপন্ন ইনসুলিন যদি প্রয়োজন অনুযায়ী উৎপন্ন হতে ব্যর্থ হয় বা উৎপন্ন ইনসুলিন যদি কাজ করতে ব্যর্থ হয় বা কম উৎপন্ন হয় তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে । একে বহুমূত্র রোগ ও বলা হয় । ইনসুলিন রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিয়ে শক্তির জন্য ব্যবহার করে ।

সাধারণত দুই ধরনের ডায়াবেটিস মানুষের হয়ে থাকে ।

১. টাইপ -১
টাইপ-১ আবার দুই ধরনেরঃ

    (১) টাইপ-১-এঃ  অটোইমিউনিটির জন্য বিটা কোষের ধংসের কারণে এই টাইপ-১-এ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে ।

   (২) টাইপ-২-বিঃ যদিও এই রোগের সঠিক কারন জানা যায়নি । এটিও অটোইমিউনিটির জন্য বিটা কোষের ধংসের কারণে এই টাইপ-১-বি ডায়াবেটিস হয়ে থাকে ।

২. টাইপ-২ঃ ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’ এর কারনে হয়ে থাকে । ইনসুলিন ব্যবহার করতে না পারলে এই রোগ হয় । সাধারণত ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সে এই রোগ হয়ে থাকে ।

ডায়াবেটিস হলে কি কি করা যাবে ? আর কি কি করা যাবেনা এরকম প্রশ্ন সবারই থাকতে পারে । বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তার কিছু  গুরুত্যপূর্ণ সমাধান এখানে দেয়া হলঃডায়াবেটিস কী কোন ছোঁয়াচে রোগ?
  •  এক কথায় না । আসলে ডায়াবেটিস কোন ছোঁয়াচে রোগ না। পরিবারের একজনের ডায়াবেটিস হলে তার সংস্পর্শে এলে বা তার ব্যবহৃত কোন কিছু ব্যবহার করলে অন্যদের  ডায়াবেটিস হবে না। তবে বাবা মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে পরবর্তীতে সন্তানদের বংশগতির হিসেবে  ডায়াবেটিস হতে পারে। ডায়াবেটিসকে ছোঁয়াচে রোগ বলা যাবেনা ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য দৈনিক কতক্ষণ ব্যায়াম করতে হবে?
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে দৈনিক ৩০-৪০ মিনিট সময় ব্যায়াম করলেই যথেষ্ট। ব্যায়াম হিসেবে দ্রুত গতিতে হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো বা ঘরে বসে ব্যায়ামের যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে অনেকে মনে করেন ব্যায়াম করার সময় পাই না কি করব । যদি আপনি শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করে থাকে টানা ৩০-৪০ মিনিট তাহলে আপনার ব্যায়াম না করলেও চলবে ।
 সন্তান ধারণ করতে পারবে?
  •  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারী অবশ্যই সন্তান ধারণ করতে পারবে। তবে তার জন্য সন্তান ধারণ করার পূর্ববর্তী এবং গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই ডায়াবেটিস সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে  গর্ভস্থ শিশুর নানা ধরণের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।  একমাত্র চিকিৎসা ইনসুলিন ইনজেকশন। গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখে খাবার কোন ওষুধ দেওয়া যাবে না। এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে ।
ডায়াবেটিস রোগীরা কী মিষ্টি জাতীয় ফল খেতে পারবে?
  •  অবশ্যই ডায়াবেটিস হলে মিষ্টি জাতীয় ফল খাওয়া যাবে। ডায়াবেটিস চার্টে উল্লেখিত পরিমাণে মিষ্টি জাতীয় ফল খেতে হবে পরিমাপ ঠিক রেখে। ফলের পরিমাণ বারডেম হাসপাতাল কর্তৃক সরবরাহকৃত গাইড বইয়ে দেওয়া আছে। একেবারে খাওয়া যাবেনা এরকম বলা ভুল ।
যাদেরকে ডাক্তার ইনসুলিন নিতে বলেছেন তারা কি করবেন ?
  • ইনসুলিন নেয়ার পর অনেকের ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে । অনেকেই তখন ইনসুলিন নেয়া বন্ধ করে দেন এটা ঠিক না  । ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ইনসুলিন  নেয়া বন্ধ করা যাবেনা তাহলে ডায়াবেটিস আবার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কখনো ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিন বন্ধ করা যাবে না। ডাক্তার যদি বলেন বন্ধ করতে তাহলে বন্ধ করুন ।

তেতা জাতীয় বিভিন্ন রস যেমনঃ করলার রস, চিরতার পানি,  মেহগনির বীচি ইত্যাদি খেলে কী ডায়াবেটিস কমে?
  • তিতা জাতীয় রস বা খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়বে না। কারণ এর কোনোটাই মিষ্টি জাতীয় খাবার না। মিষ্টি জাতীয় খাবার না খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে না । তবে এই জাতীয় খাবারগুলো খেলে ডায়াবেটিস অনেকেরই কমে যায় । আবার অনেকের কিছুই হয় না । তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এধরনের তিতা জাতীয় রস বা খাবার খেয়ে একেবারে ডায়াবেটিস কমানো উচিৎ না হিতে বিপরীত হতে পারে এমনকি অন্য কোন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে ।
ওষুধ খেতে বা ইনসুলিন নিতে ভুলে গেলে কী করবেন?
  •  যদি আপনার ওষুধ খাওয়ার কথা ভুলে যান তাহলে ঘাবড়াবেন না । যদি ওষুধ বা ইনসুলিন খাওয়ার আগে নেওয়ার কথা থাকে তাহলে খাওয়ার মাঝখানে বা খাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে মনে পড়লেও নিতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে একটু বাড়তি শর্করা জাতীয় খাবার খেয়ে নিতে হবে। তবে খাওয়ার আধা ঘণ্টা পরে মনে পড়লে ওই বেলার ওষুধ বা ইনসুলিন আর নেওয়া যাবে না। এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে । তবে মনে করে নিয়ম মাফিক ঔষধ খাওয়াটাই ভাল । বেশী বেশী এরকম ভুলে গেলে চোখের সামনে বা খাবারের টেবিলের সামনে চার্ট লিখে রাখলে সহজে ভুল হবে না । 

একবার ইনসুলিন নিলে কি সারা জীবনই তা নিতে হবে?

  •  এটি একটি কমন প্রশ্ন । অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ থাকা সত্তেও ইনসুলিন নিতে চান না । আবার অনেকে ডাক্তারকে বলেন আমাকে ইন্সুলিনের পরিবর্তে অন্য কিছু দেন । ভয় একটাই সারাজীবন নিতে হবে বলে অনেকেই ভয় দেখান । কিছু ক্ষেত্রে সারাজীবনই ইনসুলিন নিতে হবে।  বাচ্চাদের ডায়াবেটিস হলে ( টাইপ- ১), মুখে খাওয়ার ওষুধ সর্বোচ্চ মাত্রায় দেওয়ার পরও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না আসলে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিন বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন: গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বাচ্চা প্রসব করার পর, বড় কোন অপারেশনের পরবর্তী পর্যায়ে যখন রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল হবে। আবার কিছু ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের প্রথম অবস্থায় যদি ডায়াবেটিস খুব বেশি অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে সেক্ষেত্রে কিছুদিন ইনসুলিন নিয়ে শর্করার মাত্রা কমিয়ে এনে মুখে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই হতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। তবে নিজে নিজে ইনসুলিনের পরিবর্তে অন্য কোন ঔষধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন ।

ডায়াবেটিক রোগী কী বাজারের বিভিন্ন কোমল পানীয় পান করতে পারবে?

  • এক কথায় না, বাজারের কোন ধরণের কোমল পানীয় পান করা যাবেনা। কারণ, একগ্লাস কোমল পানীয়  যেমনঃ পেপসি, সেভেন আপ, কোক ইত্যাদি মানেই হচ্ছে ঘন এক গ্লাস চিনির শরবত। যেখানে শরীরে চিনির পরিমানের আধিক্যের কারনে বা ইনসুলিনের ঘাটতি বা ইনসুলিন অকেজো হওয়ার কারনে ডায়াবেটিস হয় সেখানে চিনির শরবত পানা করা যাবে না । তবে যে সমস্ত কোমল পানীয়র উপরে `ডায়েট` কথাটা লিখা থাকবে তা পান করা যাবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্যথায় এগুলো পান করা থেকে বিরত থাকুন ।
ডায়াবেটিক রোগীরা কী খাবার স্যালাইন খেতে পারবে?
  •  ডায়াবেটিক রোগীরা খাবার স্যালাইন খেতে পারবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে স্যালাইন খাওয়া যাবে না । বা বার বার স্যালাইন খাওয়া যাবে না । তবে তা শুধু ডায়রিয়া হলে বা বারবার বমি হলে স্যালাইন খাওয়া যাবে ।
বিকল্প চিনি দিয়ে কী চা, কফ বা শরবত খাওয়া যাবে?
  • হ্যাঁ  বিকল্প চিনি দিয়ে চা, কফি, শরবত বা অন্য কোন পানীয় খাওয়া যাবে। প্রতিদিন  ২-৩ কাপ চা, কফি বিকল্প চিনি দিয়ে পান করলে তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না। এর বেশী পান করলে অন্যান্য সমস্যা হতে পারে । তবে বিকল্প বলতে ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এরকম চিনি ।


মাটির নীচের সবজি খেলে কী ডায়াবেটিস বাড়বে?

  • সবজি বা খাবারের ক্ষেত্রে মাটির নিচের বা উপরের হিসেব করা যাবেনা উপাদান হিসেব করতে হবে ।  মাটির নীচে বা ওপরে- যে সবজিগুলোতে শর্করা জাতীয় উপাদান আছে তা বেশি খেলে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজ বাড়বে। যেমন: আলু মাটির নীচে থাকে যা পুরোটাই শর্করা জাতীয় খাবার। সুতরাং আলু বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে শর্করা বাড়বে যা ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে বিপদজনক। আবার মিষ্টি কুমড়া মাটির উপরে গাছে ধরে। কিন্তু এটা বেশি খেলেও শরীরে শর্করা বাড়বে। আবার পেঁয়াজ, রসুন, আদা, বাদাম এগুলো মাটির নীচে থাকে কিন্তু বেশি খেলেও রক্তের শর্করা বাড়ায় না। তাই উপাদান বিবেচনা করে সবজি খেতে হবে ।
দিন দিন ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
  • ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট কোন কারন নাই । তবে ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে পরিবর্তিত জীবন যাপন পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস এবং বংশগতি। পরিশ্রম না করা, ফাস্টফুড, জাংক ফুড বেশি খাওয়া, অত্যধিক মানসিক চাপ আবার পিতামাতার ডায়াবেটিস থাকার কারনে বংশ পরম্পরায় তাদের সন্তানদেরও ডায়াবেটিস হওয়া ইত্যাদি কারনে দিন দিন ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে ।
ডায়াবেটিক রোগীর যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে কী ডিম, দুধ, মাংস খেতে পারবে?
  •  ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ দুটি আলাদা রোগ । এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে দুধ, ডিমের, মাংসের কোন সম্পর্ক নাই। লবন ও লবনাক্ত খাবার যেমনঃ চিপস, লবনযুক্ত বাদাম, লবনাক্ত মাছ ইত্যাদি খেলে রক্তচাপ বাড়ে । তাছাড়া না ঘুমানো, মানসিক দুঃশ্চিন্তা, অতিরিক্ত পরিশ্রম ইত্যাদি কারণেও রক্তচাপ বাড়তে পারে। একজন ডায়াবেটিক রোগী চাইলে প্রতিদিন ১টা ডিম ও ১ কাপ দুধ খেতে পারে।আবার খাবেরের চার্ট অনুযায়ী বা পরিমান অনুযায়ী মাংস খেলেও কোন সমস্যা হবে না ।
তবে মনে রাখতে হবে যে, কোন ধরনের ডায়াবেটিস আপনার শরীরে সে অনুযায়ী জিবন-যাপন করতে হবে । এতে শারীরিক ভাবে আবার মানসিকভাবেও সুস্থ্য থাকা যায় । যেহেতু, আমাদের দেশের কোনো খাবারেই ক্যালোরির পরিমাণ লেখা থাকে না বা আমরা জানি না। তাই খাবার গ্রহনের আগে জেনে নেয়া ভাল আপনি কি খাচ্ছেন আর খাবারে কি পরিমান ক্যালরি আছে । আসলে আমাদের জীবন যাপনের ধরন এবং খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।








____________________

1 comment:

  1. This is SO beautiful, Lane. Thank you so much for posting. I cannot wait to see this in person some day.

    gadgets guide
    gadgets guide
    gadgets guide
    gadgets guide

    ReplyDelete