Saturday, June 15, 2019

কীভাবে পোড়া দাগ দূর করবেন





শরীরের কোন অংশ পোড়ে গেলে সে জায়গাটিতে পোড়া দাগ হয় । বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি বেশী হয়, কারন তারা রান্না-বান্না করতে গিয়ে অনেক সময় ভুলবশত চুলার আগুনে তাদের হাত পোড়ে ফেলে । আবার অনেক সময় গরম চামচ বা গরম মাছলদানির বা মাছউল্টানির দ্বারা তাদের হাত বা শরীরের অন্যান্য অংশ পোড়ে ফেলে । আবার অনেক সময় গরম তেল বা পানিতেও তাদের হাত বা শরীর পোড়ে ফেলে । আর তাই তাদের শরীরে পোড়া দাগের পরিমান বেশী হয় । এই পোড়া ভাল হয়ে গেলেও দাগ সহজে যেতে চায় না ।

এখানে আজকে আলু, টমেটো, মেথি, লেবু ইত্যাদি সহজলভ্য কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহার করে পোড়া দাগ কীভাবে দূর করা যায় তা উল্লেখ করা হল। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নেয়া এই ব্যবহার পদ্ধতিগুলো হলঃ




ঠান্ডা পানির ব্যবহারঃ পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পোড়া স্থানটিতে কয়েক মিনিট ঠান্ডা পানি ঢালুন । কারন ঠান্ডা পানি পোড়া জায়গার জ্বালা-পোড়া কমায় এবং ফোসকা পড়ার ঝুঁকিও কমায়। প্রতি দুই তিন ঘন্টা পর পর আক্রান্ত স্থানটিতে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ঠান্ডা দুধও ব্যবহার করতে পারেন। তবে পোড়া স্থানে বরফ ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ বরফ পোড়া স্থানের রক্ত চলাচল বন্ধ করে দিয়ে পোড়া স্থানের ক্ষতির কারণ হতে পারে। 


গোল আলুর ব্যবহারঃ গোল আলুতে রয়েছে ‘ক্যাটেকোলেইস’ নামের একটি এনজাইম যা প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান হিসেবে পরিচিত। পরিষ্কার পানিতে ধোলাই করার পর আলুকে পাতলা করে কেটে পোড়া অংশের উপর ঘষে নিন। দিনে অন্তঃত দুই থেকে তিনবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন। আলুর রস ত্বকের পোড়া দাগ দূর করার পাশাপাশি হালকা পোড়া ক্ষত সারিয়ে তুলতেও সাহায্য করবে। 

টমেটোর ব্যবহারঃ আমরা জানি যে টমেটোতে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ এবং সি ইত্যাদি উপাদান থাকে। এই উপাদানগুলো পোড়া দাগ হালকা করতে সাহায্য করে এবং ত্বকে আর্দ্রতা বাড়িয়ে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই অল্প পোড়াভাব সারিয়ে তুলতে পারে। প্রতিদিন ২ বার পোড়া অংশে টমেটো কেটে এর রস হালকা করে ঘষে নিলে ভাল উপকার পাওয়া যাবে। কারন টমেটোর রস ত্বক ঠাণ্ডা রাখ। 

মেথির ব্যবহারঃ মেথি আছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এটি অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ । তাই মেথি ত্বক সুস্থ করে পোড়া দাগ সহ অন্যান্য দাগ দূর করতে সাহায্য করে। আধা কাপ মেথি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ভেজানো মেথির মিহি দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন । এবার আধা ঘণ্টা ত্বকে লাগিয়ে রাখার পর যখন শুকাবে তখন পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করুন। 

লেবু ও বাদামের তেল ব্যবহারঃ বাদামের তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন "ই"। বাদামের তেল ব্যবহারে চুল পড়া বা চুল পাকা বন্ধ হয় । বাদামের তেল ও লেবুর রস সমপরিমাণ একসাথে মিশিয়ে নিন । এবার এই মিশ্রণ ক্ষত স্থানে বা পোড়া অংশের দাগের উপর দিনে ২ বার লাগান। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে পোড়া দাগ হালকা হয়ে আসবে। তবে এই মিশ্রণ পোড়া ত্বক পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার পর ব্যবহার করতে হবে শুকানোর আগে ব্যবহার করা যাবে না। 

মধুর ব্যবহারঃ আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থানে খাঁটি মধু দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্বালা-পোড়া কমে যায়। মধু হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক ক্রিমের মত তাই পোড়া যায়গায় মধু লাগালে জীবাণুনাশকের মত কাজ করে যেমন ইনফেকশনের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ও দ্রুত শুকাতে সহায়তা করে। একটি পরিষ্কার পাতলা সুতি কাপড় বা গজে মধু লাগিয়ে পোড়া জায়গায় মধু লাগানো কাপড়টি বেঁধে রাখুন। দিনে ৩ থেকে ৪ বার কাপড়টা বদলে আবার নতুন করে বাঁধুন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে পোড়ার ক্ষত অতি দ্রুত ভালো হবে এবং সহজে দাগ হবে না।

টি ব্যাগ ব্যবহারঃ শরীরের কোনো অংশ সামান্য পুড়ে গেলে টি ব্যাগ ব্যবহারে অনেক আরাম দেবে। চা পাতায় আছে ট্যানিক এসিড যা ত্বককে ঠাণ্ডা করে ফেলে। পোড়া স্থানে ভেজা, ঠাণ্ডা টি ব্যাগ ব্যবহার করলে ত্বকের জ্বালা-পোড়া ও অস্বস্তি অনেক কমে যায়। পোড়া জায়গায় কয়েকটি ঠান্ডা পানিতে ভেজা টি ব্যাগ ধরে রাখুন। একিভাবে চা পাতাও ব্যবহার করা যায় পোড়া জায়গায়। এই ক্ষেত্রে ৩ টি টি ব্যাগের সম পরিমাণ চা পাতা দিয়ে চায়ের লিকার বানিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এবার পোড়া স্থানে পরিষ্কার তুলো বা নরম কাপড় দিয়ে চায়ের লিকারটি লাগান। 

ভিনেগার ব্যবহারঃ ভিনেগার যা প্রাকৃতিক "অ্যাস্ট্রিনজেন্ট" ও "অ্যান্টিসেপ্টিক"। তাই পুড়ে যাওয়া জায়গায় ভিনেগার ব্যবহার করলে বেশ আরাম পাওয়া যায়। ভিনেগারের সাথে সম পরিমাণে পানি মিশিয়ে পোড়া জায়গা কিংবা ক্ষত স্থানটি ধুয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ব্যাথা কমিয়ে দেবে এবং ত্বকে কিছুটা স্বস্তি দিবে অনেকটাই। ক্ষত স্থানে ভিনেগার লাগিয়ে উপরে একটি কাপড় বেঁধে রাখলে ভাল হয়। প্রতি ৩-৪ ঘন্টা পর পর কাপড়টা বদলে দিতে হবে। এতে আপনার জ্বালা-পোড়া ভাব কমে যাবে এবং ত্বকে সহজে দাগ পরবে না ।

ডিমের সাদা অংশ ব্যবহারঃ শরীরের যে স্থান পুড়ে গেছে সেখানে ডিমের সাদা অংশ লাগিয়ে দিন। কি পরিমাণ জায়গা পড়েছে সে অনুযায়ী একটি বা দুটি ডিমের সাদা অংশ লাগাতে হবে। পোড়া স্থানে যতক্ষন ডিমের সাদা অংশটা ভেজা ভেজা থাকবে ততক্ষণ জ্বালা পোড়া ভাব থাকবে না। শুকিয়ে গেলে আবার জ্বলা শুরু হলে আরেকটি ডিমের সাদা অংশ লাগিয়ে নিন। ডিমের সাদা অংশ পোড়া ক্ষত দ্রুত সারিয়ে দেয় এবং ত্বকে পোড়া দাগ পড়তে দেয় না। ফলে পোড়া জায়গাটি শুকানোর পর সেখানে পোড়া দাগ পড়ার সম্ভাবনা থাকে না ।

____________________________


No comments:

Post a Comment