Monday, June 17, 2019

হাঁটু ব্যাথা ? কি করবেন



হাঁটু ব্যথা খুবই কষ্টদায়ক ও যন্ত্রণাদায়ক । দৈনন্দিন কাজে বাঁধা দেয়ার পাশাপাশি হাঁটু ব্যাথা মানুষকে নানা বিপদে ফেলে দেয় । হাঁটু ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে কিছু কাজ অবশ্যই করা উচিত । হাঁটু ব্যাথায় কি কি করবেন আর কি কি করবেন না তা নিয়ে আজকের আলোচনা ।

ভারতের এক অর্থোপেডিক্স এবং ট্রমাটোলজির বিশেষজ্ঞ ড. সঞ্জয় আগারওয়ালা জানান, 

"বর্তমানে হাঁটুর ব্যথা আগের তুলনায় অনেক বেশি দেখা যায়। অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং জীবনযাপনের কারণে এ সমস্যা বেড়েছে। ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সুগঠিত পেশি না হওয়ার কারণে হাঁটুব্যথা অতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।"


সঠিক খাবার খেতে হবেঃ

  • খাবার থেকে শরীর তার চাহিদা পূরণ করে । ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এবং পুষ্টিকর খাবার শক্তিশালী হাঁটু তৈরি করতে সাহায্য করে আর তাই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। আর  তাই ক্যালসিয়াম ও পুষ্টিকর খাবার খান।
 ওজন কমাতে হবেঃ
  • শরীরের পুরোটা ওজনই বহন করে দুই পা।  আর তাই  পুরো  চাপ পড়ে হাঁটুর উপর। তাই  দেহের ওজন কমিয়ে হাঁটুর উপর চাপ কমাতে হবে আর যদি দেহের ওজন বেড়ে  যায় তবে হাঁটুতে ব্যথা হবে। নিয়মিত করতে হবে  এবং তৈলাক্ত খাবার পরিহার করে, সঠিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ওজন কমানো সম্ভব।
 বিশেষজ্ঞের পরামর্শঃ
  • হাড় ক্ষয় জনিত রোগ বা  অস্টেয়োপরোসিস হলে হাঁটু ব্যাথা করে । সেজন্য নিজে নিজে চিকিৎসা না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। আর  তাই একজন বিশেষজ্ঞের অধীনে হাঁটু  ব্যাথার কারন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
সঠিকভাবে ব্যায়াম করতে হবেঃ 
  • ভারতের একজন সিনিয়র অর্থোপেডিক সার্জন ড. পঙ্কজ বাজাজ জানান, 
        "নিশ্চিত করতে হবে যে ব্যায়ামটা সুষ্ঠুভাবে চলছে। ভুল ব্যায়ামে হাঁটুতে ব্যথা হয়।"
  • ইয়োগা বিশেষজ্ঞ ইফা শ্রফ জানান, 
          "সঠিক পদ্ধতিতে ব্যায়াম এবং বিশ্রাম অতি জরুরি বিষয়। নয়তো হাঁটুসহ নানা স্থানে ব্যথা হতে             পারে।"
আর তাই সঠিকভাবে ব্যায়াম করতে হবে । অপরিকল্পিত বা ভুল ব্যায়াম ইপকারের চাইতে বরং ক্ষতি করতে পারে ।

 উঁচু জুতা  বা  উঁচু হিলসহ জুতা ত্যাগ করতে হবেঃ 
  • উঁচু জুতা বা হাই হিল জুতা পায়ের জন্য এবং হাড়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘ সময় উঁচু জুতা পরে থাকলে হাঁটুসহ দেহের বিভিন্ন অংশের হাড়ে ব্যথার সৃষ্টি হয়। 
  • একটি গবেষণায় দেখা গেছে, "যে সকল নারী হাই হিল জুতা পরেন তারা হাঁটুর ব্যথায় ভোগেন।"
মুখরোচক না স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবেঃ
  • খাদ্য গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। মুখরোচক খাবার না খেয়ে বরং সাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে । সাস্থ্যকর অনেক খাবারই মুখরোচক হয় না ।
  • সবারই উচিৎ ডায়েটে অভ্যস্ত হয়ে উঠা।  ডায়েট কন্ট্রোল করার ক্ষেত্রে  বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে হবেঃ
  • ভিটামিন ডি এর অভাবের সঙ্গে অস্টেয়োপরোসিস বা হাড় ক্ষয় রোগের সম্পর্ক রয়েছে ।
  • যেকোনো বয়সে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে ভিটামিন ডি দারুণ শক্তিশালী হাড় গঠন করে।  
  • ভিটামিন ডি সূর্যের আলোতে থাকে।
  • প্রয়োজনে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ  সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।

কিছু কিছু  ব্যায়ামে হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।  আর তাই ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই । হাঁটু ব্যথা দূর করতে যেসকল ব্যায়াম করতে হবে ঃ

  • প্রথমে আসি  ব্রিজ ব্যায়ামে এই ব্রিজ ব্যায়াম হাঁটুর পশ্চাতভাগের হ্যামস্ট্রিং সাথে নিতম্বের হাড়কে শক্ত করে। 
  1. প্রথমে মেঝেতে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়ুন। 
  2. দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটু ভাঁজ করুন। 
  3. এবার পা ও হাতের শক্তিতে কোমর উপরের দিকে তুলুন। আবার নেমে আসুন। এভাবে কমপক্ষে ১০ বার করে প্রতিদিন ব্যায়াম করুন ।
  • এবার আসি  ওয়াল স্লাইড ব্যায়ামে। 
  1. প্রথমে দেয়াল পিঠ ঠেকিয়ে মেরুদণ্ড ধীরে ধীরে দেয়ালে চাপ দিতে থাকুন।
  2. এবার পিঠ ঠেকিয়ে রেখে বা দেয়ালে চাপ রেখে ধীরে ধীরে দেয়াল ঘেঁষে নামুন। 
  3. এতে হাঁটু আস্তে আস্তে ভাজ হবে সামনের দিকে ।
  4. বুক এবং পিছনের মেরুদণ্ড সোজা রেখে ব্যায়াম করতে হবে ।
  5. হাঁটু ভাঁজ করে বসা অবস্থায় কিছুক্ষণ থাকুন। 
  6. আবার মেরুদণ্ডে চাপ বজায় রেখে উঠে দাঁড়ান।
এভাবে প্রতিদিন ১০-২০ বার করে ব্যায়াম করলে হাঁটুর ব্যাথা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
  • আরেকটি কার্যকর ব্যায়াম হলো শর্ট আর্ক কোয়াড। 
  1. প্রথমে  একটি মোটা তোয়ালে গোল করে পাকিয়ে নিন।
  2. এবার মেঝেতে সোজা পিঠ ঠেকিয়ে শুয়ে পড়ুন ।
  3. এখন যেকোনো একটি  হাঁটুর নিচের  অংশটি ঐ পাকানো তোয়ালে  রেখে মেঝেতে পিঠ ঠেকিয়ে শুয়ে পড়ুন। 
  4. এবার অপর পা হাঁটু মুড়ে উঁচু করুন।
  5. এবার হাঁটুর নিচে রাখা ভাঁজ করা পাকানো তোয়ালের উপর ভর করে পা সোজা করুন ।
  6. এভাবে কিছুক্ষণ রাখুন ।
  7.  কিছুক্ষণ রেখে পা নামিয়ে নিন। 
  8. এবার অপর পা একইভাবে ভাঁজ করুন ও নামিয়ে নিন।
প্রতিদিন এই ব্যায়াম করলে হাঁটু হবে শক্ত ও মজবুত । ***** ব্যায়ামের সময় হাঁটু বা অন্যান্য হাড়ের উপর  খুব বেশি চাপ দিবেন না। দৌড়ানো, সাঁতার কাঁটা, ট্রেডমিল বা ব্রিস্ক ওয়াকিংয়ের সময় সাবধান থাকতে হবে । যাতে করে কোন রকম এক্সিডেন্ট না ঘটে । আবার অতিরিক্ত ব্যায়াম করবেন না ।


________________________________

No comments:

Post a Comment