জন্ডিস নামটি কোন রোগের নাম না । এটি হচ্ছে অন্য কোন রোগের লক্ষণ । সাধারণত রক্তে বিলিরুবিন নামক পিগমেন্টের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয় ।
লক্ষণঃ
এ রোগে- প্রস্রাবের রং, চোখ ও ত্বক হলদে দেখালে জন্ডিস হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়, জন্ডিসে ত্বক, চোখের সাদা অংশ এবং অন্যান্য মিউকাস ঝিল্লি হলুদ হয়ে যায়, আবার অনেক সময় শরীরেও হলদেটে হয়ে যায় ।
দেহের গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গ লিভারে এই জন্ডিস আক্রমণ করে । আর তাই সময়মত চিকিৎসা ও ভাল হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে । তা না হলে এটি মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় ।
জন্ডিস হওয়ার কারণঃ
রক্তের লোহিত কণিকাগুলো ভেঙে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে, এই বিলিরুবিন লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সঙ্গে পিত্তনালির মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে। যা পরবর্তীতে পায়খানার মাধ্যমে বের হয়ে যায় । জন্ডিস বলতে সাধারণত লিভারের রোগ বোঝায় । হেপাটাইটিস ভাইরাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ওষুধ, অ্যালকোহল ইত্যাদি কারণে লিভারে প্রদাহ হতে পারে । হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ভাইরাল হেপাটাইটিস নামে পরিচিত। অটোইমিউন লিভার ডিজিজ, বংশগত কারণ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান, কোথাও ক্যান্সার, পিত্তনালির পাথর থাকলে বা টিউমার থাকলে ইত্যাদি কারনে জন্ডিস হতে পারে ।
জন্ডিসের চিকিৎসাঃ
হেপাটাইটিস ভাইরাস জনিত কারনে জন্ডিস হলে রোগীকে প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হয় । তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার ওষুধ না খাওয়াই ভাল । হেপাটাইটিস ভাইরাস জনিত কারনে জন্ডিস হলে রোগীর সুস্থ্য হতে প্রায় ১ মাস সময় লেগে যায় । আর তাই এই এক মাস বিশ্রামে থাকা জরুরী ।
কবিরাজি কোন ঔষধ না খাওয়াই ভাল । আবার ব্যাথানাশক ঔষধ, প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবেনা ।
এককথায় বলতে গেলে- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ঔষধ খেলে ভাল হওয়ার পরিবর্তে বরং খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী ।
জন্ডিস থেকে বাঁচার উপায়ঃ
(১) পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানিঃ
- হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাস জনিত জন্ডিস খাদ্য-পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। তাই সবসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে ।
(২) রক্তের দরকার হলে বা ভাইরাস চেক করে ও নতুন সিরিঞ্জের মাধ্যমে নিতে হবেঃ
- যেহেতু হেপাটাইটিস বি, সি এবং ডি দূষিত রক্ত, সিরিঞ্জ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই রক্ত নেয়ার সময় স্ক্রিনিং করে নিতে হবে । আবার নতুন সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্ত নিতে হবে ।
(৩) টিকা নেয়ার মাধ্যমেঃ
- হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা পাওয়া যায় । আর তাই এই ধরনের ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে সময়মত টিকা নিতে হবে ।
তাছাড়াও জন্ডিস থেকে বাঁচতে হলে কিছু কিছু খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবেঃ
- চা পানের অভ্যাস থাকলে হারবাল জাতীয় চা পান করুন ।
- কোমল পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন ।
- সহজে হজম হয়ে যায় এমন খাবার খান ।
- বেশী করে ফল খান । যেহেতু, আনারস সহজলভ্য তাই আনারস খেতে পারেন এটি জন্ডিসের জন্য খুবই উপকারী ।
- প্রতিদিন সকালে পুদিনা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন । এটি লিভার ফাংশনের জন্য খুবই উপকারী ।
- ডায়াবেটিস থাকলে মিষ্টি জাতীয় ফল আপনার খাদ্য তালিকায় উল্লেখিত পরিমাণে খেতে হবে ।
- বাদাম, শস্যদানা যেমন- ওটমিল, আমন্ড, ব্রাউন রাইস ইত্যাদি ফাইবার জাতীয় খাবার খান ।
- মধু, কমলালেবু, আনারস, পেঁপে, পাকা আম ইত্যাদি খান। এগুলো সহজে হজমের পাশপাশি লিভার ফাংশনেরও কাজ করে ।
কোন ঔষধ গ্রহণ করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক গ্রহণ করতে হবে । জন্ডিস অনেক সময় মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় । তাই স্বাভাবিক জীবন- যাপন করা জরুরী ।
ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম
ReplyDelete