Friday, May 31, 2019

নখ ভাল রাথার উপায়

কীভাবে আপনার নখ ভাল এবং  সাস্থ্যবান রাখবেন


আঙ্গুল এবং নখ শক্ত মাজবুত এবং স্বাস্থ্যবান হওয়া উচিৎ । আপনি যদি মনে করেন যে আপনার নখ স্বাভাবিক না বা স্বাস্থ্যবান না তাহলে এর জন্য আপনি কিছু ব্যবস্থা বা কাজ করতে পারেন , যার ফলে আপনার নখ হবে স্বাভাবিক বা স্বাস্থ্যকর । যেমন নিয়মিত রুটিন করে আপনার নখ  পরিস্কার করার চেষ্টা করুন । নিয়মিত আপনার নখের দিকে খেয়াল রাখুন, কোন ধরনের রোগ বা ফাঙ্গাস জনিত সংক্রমণ হয় কিনা সেটি খেয়াল রাখুন । নখের জন্য ক্ষতিকর এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন যেমন - হাতের নখ কামড়ানো, হাত- পা এর নখ অপরিচর্যা করা থেকে বিরত থাকুন ।
 হাত বা পায়ের নখের যত্নে আপনাকে যা যা করতে হবে তা হল-

ঔষধ বা কেমিক্যাল ব্যবহারের মাধ্যমে ঃ



 ১. কিছু কিছু কেমিক্যাল এবং ক্রিম ব্যবহারের মাধ্যমে ঃ নখের সাথে লাগানো চামড়াটি সাধারণত পাতলা হয় এবং শুকনো থাকে যার ফলে এর উপর অনেক সময়  খোসা  পরে এমনকি জায়গাটা নষ্ট হয়ে যায় । এজন্য আপনাকে যা করতে হবে -

  • নখের সাথে লাগানো চামড়া ভাল রাখার জন্য হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন । সাধারণত তৈলাক্ত জাতীয় মলম বা ক্রিম পাতলা চামড়ার জন্য খুবই উপকারি ।
  • আমেরিকান একাডেমী অফ ডারমাটোলজি -এর মতে নরম বা পাতলা স্কিন বা চামড়ার জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি খুবই উপকারি ।
  •  ক্রিম ব্যবহারে স্কিন বা চামড়া সাধারণত পরিস্কার থাকে । আর তাই ঘুমানোর আগে পাতলা স্কিন বা চামড়ায় ক্রিম ব্যবহার করুন । এর ফলে আপনার দৈনন্দিন কাজের সময় যখন আপনি কোন শক্ত কাজ করতে যাবেন তখন আপনার কাজের  কষ্ট দূর করবে  । 
২. ভঙ্গুর নখের জন্য আলফা-হাইড্রক্সি এসিড জাতীয় অথবা লেনোনিন জাতীয়  লোশন  ব্যবহার ঃ ঠাণ্ডা বা ভেজা আবহাওয়ায় অনেক সময় নখ ভঙ্গুর হয়ে যায় ।  আপনি যদি এমন কোন কাজ করে থাকেন যেটির কারনে আপনার হাত অধিকাংশ সময় ভেজা থাকে যেমন যেকোন ধরনের ভেজা কাজ বা ধৌত করার কাজ তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নখ ভেঙ্গে যায় । এজন্য আপনাকে লোশন ব্যবহার করতে হবে । কারন লোশন আপনার নখকে করে তুলবে শক্তিশালী । আলফা-হাইড্রক্সি এসিড জাতীয় লোশন অথবা লেনোনিন জাতীয়  লোশন  ব্যবহার নখের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী । লোশন কেনার আগে আপনি এটার গায়ে বা এর প্যাকেটের গায়ে লেখা উপাদান দেখে কিনুন । কারন সেটি নখের জন্য উপকারী কিনা তা লেখা থাকে । যদি সেটি আলফা-হাইড্রক্সি এসিড জাতীয় লোশন অথবা লেনোনিন জাতীয়  লোশন হয় তাহলে সেটির ব্যবহার আপনার ভাঙ্গা নখের জন্য খুবই উপকারী ।

তাছাড়া আপনি হাত মোজা ব্যবহার করতে পারেন যখন আপনি কোন কিছু ধোলাই করে পরিস্কার করেন তখন । হাত মোজা আপনার হাত এবং নখ শুকনো রাখবে । যার ফলে আপনার নখ ক্ষয় হওয়া বা ভেঙ্গে যাওয়া থেকে মুক্তি পাবে ।

৩. নখের কালার বা রং বিবর্ণ বা নষ্ট হলে চর্ম বিশেষজ্ঞ- এর পরামর্শ নিন ঃ ছত্রাক জাতীয়  
রোগের সংক্রমনের কারনে নখ সাদা, নীল, হলদে কালারের হয়ে যায় ।  ৫০%  ছত্রাক জাতীয় রোগ হয়  সাধারণত নোংরা পরিবেশ থেকে, ময়লা থেকে এবং মাটি থেকে । আর তাই ডাক্তারি পরামর্শ মোতাবেক লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করুন ।

৪.  ডাক্তারি পরামর্শ মোতাবেক আইরন বা ক্যালসিয়াম জাতীয় ঔষধ গ্রহণঃ শরীরে আইরনের ঘাটতি থাকলে নখ ভঙ্গুর, ক্ষয় বা ফেটে যায় । এরকম যদি হয় যে লোশন ব্যবহার করার পরও আপনার নখ ফেটে যায় বা ভঙ্গুর হয়ে যায় , তাহলেই আপনি বোঝবেন আপনার শরীরে আইরনের ঘটতি আছে । আর তাই আপনি অতি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ  নিন । একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই আপনি আপনার শরীরের আইরনের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন । এবং সে মোতাবেক আপনি প্রয়োজনীয় ঔষধ গ্রহণ করুন এবং খাবার খেয়ে যান ।

৫. বায়োটিন গ্রহনের মাধ্যমেঃ বায়োটিন প্রাকৃতিক উপাদান । বায়োটিন নখের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান । ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আপনি বায়োটিন খেতে পারেন ।

পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে ঃ


১.  নিয়মিত নখ পরিষ্কার করুনঃ  নিয়মিত নখ পরিষ্কার করুন । নখের উপরে আলতোভাবে ঘষে পরিষ্কার করে রাখুন । নখের ভিতরে থাকা ময়লা সাবান বা হ্যানডওয়াশের মাধ্যমে হাত, হাতের নখের উপরি অংশ এবং নখের ভিতরের ময়লা পরিষ্কার করে রাখুন ।

২. সবসময় নখ শুকনো রাখার মাধ্যমে ঃ  নখ সবসময় শুকনো রাখুন । কারন নখ বেশী সময় ভেজা থাকলে নখে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় । আর তাই সবসময় নখ শুকনো অবস্থায় রাখার চেষ্টা করুন । বিশেষ করে গৃহস্থালি কাজের শেষে যখন আপনি সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন তারপর হাত ভালভাবে মুছে শুকনো রাখুন।

৩. হাত শুকনো বা একেবারে খসখসে রাখা যাবেনাঃ হাতের বা পায়ের স্কিন বা চামড়ার মত নখও সবসময়  হালকা ভেজা রাখুন কিন্তু পানির মাধ্যমে না আপনার স্কিন বা চামড়ার সাথে যে ধরনের লোশন ব্যবহার করলে কোন প্রকার ক্ষতি সাধিত হয়না ঐ ধরনের লোশন ব্যবহার করুন । অর্থাৎ যখন আপনার শরীরে কোন লোশন ব্যবহার করবেন তখন শরীরের পাশাপাশি নখেও সামান্য পরিমান লোশন ব্যবহার করুন ।

  • মনে রাখবেন সাধারন লোশন আপনাকে ক্ষতি করবে কম আর অধিক পরিমানে            কেমিক্যাল যেসব লোশনে সেগুলো আপনার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে ।
  • লোশন ব্যবহারে যদি আপনি দেখেন আপনার ত্বকে কোন প্রকার সমস্যা দেখা দিয়েছে তাহলে সেটি ব্যবহার বন্ধ করে দিন কারন এটি আপনার স্কিন বা শরীরের ক্ষতি করতে পারে ।

৪. নখ কাঁটার মেশিন বা নেইল কাঁটার পরিষ্কার রাখুনঃ আপনার নখ কাঁটার মেশিন বা নেইল কাঁটার সবসময় পরিষ্কার রাখা উচিত কারন আপনার নখে থাকা রোগ জীবাণু আপনার নেইল কাটারের সাথে দীর্ঘ দিন লেগে থেকে পরবর্তীতে আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে । আর তাই ব্যবহারের পূর্বে আপানার নেইল কাঁটার ভালভাবে পরিষ্কার করে নিন ।

৫. শক্ত প্রকৃতির নখের জন্যঃ যাদের নখ মোটা বা পাতলা না তারা নখ কাঁটার পূর্বে সামান্য গরম পানিতে ১-২ চা চামচ পরিমান লবন মিশিয়ে তারপর পা ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন তারপর নখ কাটুন । এতে করে একধিকে যেমন আপনার নখে লেগে থাকা রোগ-জীবাণু ধ্বংস হবে অন্যদিকে আপনার নখ নরম হবে ফলে সহজেই আপনি আপনার  নখ কাটতে পারবেন ।


কিছু  অভ্যাস ত্যাগের মাধ্যমেঃ

  
১. নখ কামড়াবেন না ঃ অনেকেরই  নখ কামড়ানোর মত বদ- অভ্যাস রয়েছে । এটি নখের জন্য খুবই ক্ষতিকর । নখ কামড়ালে নখের স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা ব্যহত হয় । তাছাড়া নখের সাথে লেগে থাকা স্কিন বা চামড়ার টিস্যুগুলো নষ্ট হয়ে যায় । এতে করে নখের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা ব্যহত হয় । 

নখ কামড়ানোর অভ্যাস দূর করার কিছু টিপস ঃ
  • সবসময় নখ ছোট রাখুন এতে আপনার নখ কামড়ানোর জন্য মন চাইবে না । আপনি নখে এরকম নেইল পলিশ ব্যবহার করুন যেগুলোর স্বাদ ভালনা বা এর স্বাদের কারনে আপনার নখ কামড়াতে মন চাইবেনা ।
  • কি কারনে আপনি নখ কামড়ান সেতির কারন খোঁজে বের করুন । এবং সেই কারন থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন । যদি এরকম হয় যে আপনি সবসময় একটা কিছু করতে ভাল লাগে তাহলে হাতে ছোট বল রাখুন এতে আপনার হাত সবসময় ব্যস্ত থাকবে যার ফলে আপনি নখ কামড়ানোর সুযোগই  পাবেন না ।
  • নখ না কামড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন দেখবেন আস্তে আস্তে একসময় আপনার নখ কামড়ানোর মোট বদ- অভ্যাস আর থাকবেনা ।

২. নখের সাইডের চামড়া তুকবেন নাঃ নখের সাইডে যদি চামড়া শুকিয়ে উঠে যায় তাহলে ঐ চামড়া  টেনে তোলা থেকে বিরত থাকুন । কারন এতে করে আপনার স্কিন বা চামড়ার ক্ষতির পাশাপাশি ইনফেকশন হতে পারে ব্যথা হতে পারে অস্বস্তি লাগতে পারে ।

৩. এসিটোন মুক্ত নেইল পলিশ রিমুভার ব্যবহার করুন ঃ যে সকল ব্র্যান্ডের নেইল পলিশ রিমুভার এ এসিটোন থাকেনা ঐ সকল ব্র্যান্ডের নাএইল পলিশ ব্যবহার করুন । বেশী বেশী নেইল পলিশ রিমুভার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন । কারন অতিরিক্ত নেইল পলিশ রিমুভার আপনার নখকে  দুর্বল বানিয়ে ফেলতে পারে ।

৪. জীবাণু নাশক ব্যবহার করা এবং অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাঃ  আপনি যে সেলুন থেকে আপনার চুল কাটান আগে দেখে নিবেন ঐ সেলুনটির পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত কিনা ।  বা সরকারিভাবে অনুমোদন প্রাপ্ত কিনা ।

 ৫. পায়ের নখ ভাল রাখতে উপযুক্ত জুতা ব্যবহার করুন ঃ ঐ  ধরনের জুতা ব্যবাহার করুন যেগুলো ব্যবহারের ফলে আপনার পায়ের নখের কোন ক্ষতি হবেনা । যেমন - জুতার ভিতরে যেখানে নখ থাকবে ঐ জায়গাটা যেন  ঢিলে ঢালা থাকে এতে করে আপনার নখের উপর কোন  ধরনের চাপ লাগবেনা বা নখের ও কোন ক্ষতি হবেনা ।

সবসময় নখের প্রতি খেয়াল রাখুনঃ 


১. ছত্রাক সংক্রমণ চিকিত্সাঃ  যদি আপনার আঙ্গুল বা পায়ের আঙ্গুল মধ্যে ছত্রাক সংক্রমণ থাকে তাহলে সংক্রমণ চিকিত্সা পদক্ষেপ নিতে হবে । প্রয়োজনে আপনার কোন নখে যদি ছত্রকের সংক্রমণ থাকে তাহলে ঐ জায়গাটা সনাক্ত করুন । নখে জন্মানো ছত্রাক সাধারণত হলদে বা সাদা কালারের স্পট তিরী করে ।
  • একেবারে কম পরিমানে ছত্রাক জন্ম নিলে সেটির জন্য চিকিৎসা নেওয়া খুব জরুরী না । এটি আপনার তেমন কোন ক্ষতি করবে না । কিন্তু যদি ছত্রাকের কারনে আপনার নখ শক্ত হয়ে যায় এবং আপনার নখে ব্যথা পান  তাহলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের লাছে যেতে হবে ।
  •  আপনার সংক্রমণের তীব্রতার উপর নির্ভর করে । আপনার ত্বক বিশেষজ্ঞ  মৌখিক-ফাঙ্গাল ঔষধ নির্ধারণ করতে পারে ।
২. মেলানোমার লক্ষণ আছেকিনা তা খেয়াল রাখুনঃ মেলানোমা স্কিন ক্যান্সারের জন্য দায়ী । অল্প সংখ্যক লোকেরই হাতের নখে মেলানোমা দেখা যায় । যেকোন ক্যান্সারের চেয়ে আপনি মেলানোমাকে ভালভাবে সনাক্ত করতে পারবেন । আপনার আঙ্গুলের নীচে অন্ধকার রঙিন দাগ আছেকিনা খেয়াল রাখুন ।

৩. আপনার নখের কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুনঃ  আপনার নখের রঙ এবং কালার আপনার শরীরের অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা পুরভাবাস করতে পারে । সবসময় নখের দিকে নজর রাখুন । যদি অস্বাভাবিক কোন কিছু দেখেন সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যান ।
  • শরীর বা স্কিনের একেবারে প্রান্তে বা শেষ ভাগের সাথে  নখ  বা  পার্শ্ব-পাশের লাইনের নখ, এবং সাদা ছিদ্র বা দাগযুক্ত নখগুলি কিডনি রোগের একটি চিহ্ন হতে পারে ।
  • সোরিয়াসিস রোগটি, শরীরের স্কেল লাল প্যাচ দ্বারা চিহ্নিত একটি ত্বকের অবস্থা । এটিও আপনার নখের কাছে দেখা দিতে পারে । আপনার নখের উপরিভাগ বা নিচের ভাগের দিকে সবসময় খেয়াল রাখুন কালো দাগ, লালচে ভাব বা সাদা দাগ হ্য কিনা সেটিও সবসময় খেয়াল রাখুন ।  

মনে রাখবেন নখের পরিবর্তন বা নখের কালারের পরিবর্তন হচ্ছে শরীরের কোন সমস্যার পূর্ব লক্ষণ । আপনার নখই আপনাকে বলে দিবে আপনার শরীরে কোন প্রকার সমস্যা আছে কিনা । আর তাই নখের অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা নখের কালারের পরিবর্তন দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে ।



____________________

No comments:

Post a Comment