Sunday, April 11, 2021

ডায়াবেটিক রোগীদের রোজার প্রস্তুতি

রোজা শব্দের অর্থ হচ্ছে 'বিরত থাকা'। আর আরবিতে এর নাম সাওম, বহুবচনে সিয়াম। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। বলতে গেলে সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন করা ।  আবার সুশৃঙ্খল জীবন ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য অপরিহার্য। 

বেশির ভাগ ডায়াবেটিক রোগীই রোজা রাখতে পারেন এবং এতে তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা হয় না । 

তবে রমজান মাস শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু বিশেষ সতর্কতা, নিয়ম আর শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে । আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সহজে ও নিরাপদে রোজা রাখার সুযোগ করে দিয়েছে।

যেমনঃ

পূর্বপ্রস্তুতিঃ

ডায়াবেটিক রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন। এ জন্য প্রয়োজন কিছু পূর্বপ্রস্তুতি।

  •  চিকিৎসক রোজার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা এবং এ থেকে উত্তরণের উপায়গুলো বাতলে দেবেন।
  •  দিন-রাত সুগার পরিমাপ করে ওষুধ সমন্বয়ের ব্যাপারে রোগী ও রোগীর পরিবার সবাইকে শিক্ষা প্রদান করবেন।
  •  হাইপো না হওয়ার জন্য খাদ্য, ব্যায়াম এবং ওষুধের সমন্বয় করে দেবেন।
  •  প্রত্যেক রোগীর জন্য একই ব্যবস্থা প্রযোজ্য নয় বিধায় রোগীর অবস্থা অনুযায়ী আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • রোজার জন্য সব স্বাস্থ্যবিধি পালন করেও যদি স্বাস্থ্যহানি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাদের রোজা না রাখাই উচিত। সে ক্ষেত্রে ফিদিয়া বা কাজা রাখার বিধান আছে।
  •  রমজানের আগে নফল রোজা রেখেও প্রস্তুতি নেওয়া ভালো।
  •  রমজানের ফরজ রোজা সঠিকভাবে আদায়ের জন্য রোজার আগে থেকে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিলে ভালো হয়।


যারা রোজা রাখতে পারবেন নাঃ

  • রোজার সময় যেসব ডায়াবেটিক রোগীর ডায়রিয়া বা বমি হয়।
  • ব্রিটল ডায়াবেটিস রয়েছে যাঁদের। অর্থাৎ যে ডায়াবেটিসে রক্তে সুগারের মাত্রা খুব বেশি ওঠানামা করে।
  • যাঁদের অন্যান্য জটিল অসুখ, যেমন—কিডনি, হৃদরোগ বা কোনো ইনফেকশন ইত্যাদি রয়েছে।


ঝুঁকি কম যাদের:

  • যাঁরা মেটফরমিন, গ্লিটাজোনস কিংবা ইনক্রিটিন জাতীয় ওষুধ খান। তবে যাঁরা সালফোনাইলইউরিয়া ও ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তাঁদের ঝুঁকি কিছুটা থাকে। ওষুধ ও ইনসুলিনের ধরন অনুযায়ী এর তারতম্য হয়।
  • যাঁরা শুধু খাবার ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেন।


ওষুধের ডোজ সমন্বয়ঃ

  • রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করা, এমনকি প্রয়োজন হলে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নেওয়া যেতে পারে। ধর্ম বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। সুতরাং এসব নিয়ম মেনে ডায়াবেটিক রোজাদার রোজা রাখতে পারবেন। 
  • রমজানের আগে আগে ওষুধের ডোজ সমন্বয় করে নিন। অন্য সময়ের তুলনায় সাধারণত এ সময় মুখে খাওয়ার ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজ কিছুটা কমিয়ে আনতে হয়। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনবারের ওষুধ একবার বা দুইবারে পরিবর্তন করে আনুন।
  • যাঁরা দিনে এক বেলা ওষুধ খান, তাঁরা ইফতারের আগে পরিমাণে একটু কম খাবেন।
  • রমজানের আগে থেকে সকাল বা দুপুরের ওষুধ রাতে খাওয়ার অভ্যাস করুন। অর্থাৎ যাঁরা মুখে খাওয়ার ওষুধ খান তাঁরা সকালের ডোজটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের ডোজটি অর্ধেক পরিমাণে সাহরির আধাঘণ্টা আগে খাবেন।
  • ইনসুলিনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। অর্থাৎ সকালের ডোজটি ইফতারের আগে, রাতের ডোজটি কিছুটা কমিয়ে সাহরির আধাঘণ্টা আগে। কতটা কমাবেন তা চিকিৎসক বলে দেবেন।
  • দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করে এ রকম কিছু ইনসুলিন এখন বাজারে পাওয়া যায়। এসব ইনসুলিন দিনে একবার নিলেই হয়। এতে হঠাৎ সুগার কমে যাওয়ার ভয়ও কম থাকে। রোজার সময় মুখে খাওয়ার ওষুধের ক্ষেত্রে এ রকম দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করা ওষুধ ব্যবহার কিছুটা নিরাপদ।


নিয়মিত সুগার পরীক্ষা করুন:

  • রোজার সময় রাতে, এমনকি দিনেও সুগার মাপুন; যাতে ওষুধের মাত্রা ঠিকভাবে সমন্বয় করা যায়। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।
  • সাহরির দুই ঘণ্টা পর এবং ইফতারের এক ঘণ্টা আগে রক্তের সুগার পরীক্ষা করুন। যদি সুগারের পরিমাণ কমে ৩.৯ মিলিমোল/লিটার হয়ে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে।
  • রোজায় যদি সুগারের মাত্রা ১৬.৭ মিলিমোল/লিটার বা তার বেশি হয়, তাহলে প্রস্রাবে কিটোন বডি পরীক্ষা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে চামড়ার নিচে ইনসুলিন নেওয়া যেতে পারে।

গ্লুকোজের মাত্রা কমবেঃ

রোজায় দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা হয়। সে কারণে দিনের শেষভাগে ডায়াবেটিক রোগীদের বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া অন্য যেকোনো অতিরিক্ত কাজ করলেও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে। যেমন—

  • বরাদ্দের চেয়ে খাবার খুব কম খেলে বা খাবার খেতে ভুলে গেলে।
  • বড় ধরনের শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম
  •  অতিরিক্ত ইনসুলিন অথবা ট্যাবলেট গ্রহণ
  • ইনসুলিন ও সিরিঞ্জ একই মাপের না হল


হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণঃ

  • অসুস্থ বোধ করা                                        
  • খিদে বেশি পাওয়া
  • বুক ধড়ফড় করা                                       
  • ঘাম বেশি হওয়া
  • শরীর কাঁপতে থাকা          
  • শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা
  • চোখ ঝাপসা হয়ে আসা                              
  • অস্বাভাবিক আচরণ করা
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া                                    
  • খিঁচুনি হওয়া ইত্যাদি।


হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে করণীয়:

  • হাইপোগ্লাইসেমিয়া একটি মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি। এটি ঘটলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন :
  • রোজাদার ব্যক্তির হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করতে হবে।
  • রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে চা চামচের ৪ থেকে ৬ চামচ গ্লকোজ বা চিনি এক গ্লাস পানিতে গুলে খাওয়াতে হবে। গ্লুকোজ বা চিনি না থাকলে যেকোনো খাবার সঙ্গে সঙ্গে দিতে হবে।
  •  রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে মুখে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা না করে গ্লুকোজ ইঞ্জেকশন দিতে হবে।
  • যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।


হাইপোগ্লাইসেমিয়া থেকে রক্ষার উপায়

  • মানানসই সামঞ্জস্যসম্পন্ন এবং নিরাপদ খাদ্য ও ওষুধ গ্রহণ করুন।
  • কঠিন শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রমের কাজ পরিহার করুন।
  • রোজার সময়ে দেরিতে ইফতার গ্রহণ করবেন না।


ডায়াবেটিক রোগীরা রোজা যেসব জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেনঃ

ডায়াবেটিক রোগীদের রোজা রাখার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে  পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখলে বেশ কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন। যেমন—

  • রক্তে সুগারের স্বল্পতা (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) 
  • রক্তে সুগারের আধিক্য (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)
  • ডায়াবেটিক কিটো-অ্যাসিডোসিস
  • পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি।

3 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. This is a very informative and important post. We need to know all these things in our daily life. Congratulations on posting on such a topic.

    ReplyDelete
  3. Power bank price

    Sakil Gadget is an online/offline gadgets & accessories store for the latest & branded wireless headphones, Bluetooth speakers, watches & other types of products at best price in Bangladesh.

    ReplyDelete